জেগে উঠছে অন্যরকম এক ভারত !

Bengali translation ofThe other India rises in massive general strike (March 5, 2012)

মূল: লাল খান

অনুবাদ : একেএম শিহাব

বিগত ৬৫ বছরে, জাপানের চেয়ে ও বেশী বিলিয়নিয়ার  অধ্যুষিত হওয়া সত্বেও ভারতীয় শাষক গৌষ্ঠি জাতীয় গনতান্ত্রিক বিপ্লব সাধনের কাজটি করতে সম্পূর্নভাবেই ব্যর্থ হয়েছে । ইহা এক জ্বাজল্যমান ঐতিহাসিক র্ব্যথতা । ইহাকে অস¦ীকার করার কোন উপায় নেই । পুজিঁবাদের অধীনে ভারতীয় জনগণের সামনে এগোবার কোন পথ খোলা নেই । অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধি ইতিমধ্যে সংকুচিত হতে শূরু করেছে । সাধারণ জনগণের র্আথ-সামাজিক অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।

সা¤প্রদায়িক  উন্মত্ততা, সামপ্রদায়িক সহিংসতা, আঞ্চলিক দ্বন্ধ,জাতিগত বৈষম্য, ধর্মীয় গোঁড়ামী,জাতীয়তাবাদী উগ্র জাতীয়তাবাদ, আঞ্চলিক শত্র“তা, গণতান্ত্রিক প্রহেলিকায় শাসকশ্রেণী ও তাদের বিশ্বস্থ গনমাধ্যম এবং ক্রিকেট হিষ্টরীয়ার মধ্যে কয়েক দশক ধরে শোষিত ও নিগৃহীত হওয়ার পর ভারতীয় প্রলেটারিয়েট জেগে উঠেছে ,এক নতুন সময়ে, দিন বদলের প্রত্যয়ে, সমগ্র বিশ্বজুড়ে ।২৮ফেব্র“য়ারী, ২৪ঘন্টা সর্বপ্লাবী ধর্মঘট সমকালিন ভরতীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে পরিবর্তনের এক যুগান্তকারী ঘটনা ।

জ্যোতির্ময় ভারত,নতুন শক্তিশালী এক পরাশক্তি এবং বৃহত্তম অথর্নীতি,স¤প্রসারনশীল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড,দ্রুত র্বধনশীল প্রবৃদ্ধি ও আধুনিক ধারনার বিকাশে ভারত একবিংশ শতাব্দীতে স্থান করে নিয়েছে । মুকেশ আম্বানীর ২৭তলা বিশিষ্ঠি রাজ প্রাসাদ তুল্য বাসভবন নিমর্িাণ, যার মধ্যে রয়েছে কয়েকটি হেলিপেড,সুইমিংপুলস, স্থুল আনন্দদায়ী যন্ত্রপাতি সহ সকল প্রকার বিলাসিতার ব্যাবস্থা । অথচ তার পর্শ্বেই রয়েছে মুম্বাই শহরে গড়ে উঠা লক্ষ লক্ষ গৃহহীন দরিদ্র মানুষের নোংরা বস্তি ও ছেড়া পলিথিনে তৈরী কর্দমাক্ত কুঁেড় ঘড়, যেখানে এক সাথে বাস করে

লা ওয়ারিশ কুকুর আর  অসুেখ বিসুখে আক্রন্ত গরীব মানুষ । এটি এমন একটি দেশ যেখানে প্রতিবছর প্রায় ২৫০.০০০ কৃষক আত্মহত্যা করে ফসলের পোকা মারার ঔষধ খেয়ে । অন্যদিকে রমেশ টাটা, যার দখলে আছে ভরতের শিল্প জগতে জাগুয়ার বলে খ্যাত বৃহৎ ম্যানুফেকচারিং প্ল্যান্ট । যিনি তাঁর মুকুঠে  সফলতার স্বর্ণালী পালক পড়ে আছেন । পৃথিবীর বৃহত্তম এই গনতান্ত্রিক দেশে এর পার্শ্বেই প্রায় ১ বিলিয়ন লোক অর্ধাহাওে অনাহারে দিনাতিপাত করছেন, যাদের দৈনিক আয় মাত্র ৫০ সেন্ট বা তার নিচে।

যখন সাম্রাজ্যবাদী একাধিপত্য ভারত মাতার রক্ত শোষন করে, তখন ভারতীয় বহুজাতিক কেম্পানীর শীর্ষ ব্যাক্তিগন যৌথ উদ্যোগে মুনাফা বৃদ্ধির জন্য মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইঊরোপ পর্যন্ত কর্মরত  । তাদের সীমাহীন লোভকে চরিতার্থ করতে যখন দূর্নীনীতির মহাসমারোহের মাধ্যমে সুইস ব্যাংকে প্রতিবছর গড়ে ৫০০ বিলিয়ন ডলার জমা করে আসছে । তখন ভরতের মাটিতে নূন্যতম ঊদ্যোগের অভাবে এই সভ্য দুনিয়ার সামনে প্রতিবছর প্রায় ৩০,০০০ শিশু মারা যায় শুধুমাত্র অপুষ্টিজনিত কারনে । 

বিগত দুই দশকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভরতে আয়বৈষম্য বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন, উদিয়মান অর্থনৈতিক দেশ গুলোর সর্বশেষ রেংকিং এ তা প্রদশর্ন করা হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি, শ্রমবাজারের সংস্কার, শিল্পের বেসরকারীকরন এবং অর্থনৈতিক নীতিমালার পরিবর্তন, মজুরী হ্রাস, এবং অন্যান্য উদারীকরণ প্রক্রিয়া কর্মজীবি মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে ।  ফলে শহরতলী ও গ্রমীন জনসংখ্যার এক বিপুল অংশ হতাশা, ও বঞ্চনার অতল গহবরে দ্রুত তলিয়ে যাচ্ছে ।

দুর্নীতিবাজ, প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিবিদদের কলঙ্ককে ঢেকে রাখার অপচেষ্টা হিসাবে জাতীয় অপ্রধান ও তুচ্ছ বিষয়কে প্রধান ইস্যু করে মাঠ গরম করে জনগনের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে একজন নব্য ফ্যাসিষ্ট বাগ্মী আন্না হাজরাকে বহুজাতিক কোম্পানী গুলোর সহযোগীতায় এবং তাদের উপদেষ্টাদের পরামর্শেই নাটকীয় ভাবে মঞ্চে আনা হয় ; যেন সময় ক্ষেপন করে পুজি কে সুরক্ষিত করতে পারা যায় তারা। কিন্তু সর্বোপরি, সময় ক্ষেপনকারীদের অপচেষ্টাকে তোয়াক্ষা না করে, সমাজের গভীর থেকে বুর্জোয়া ব্যবস্থার বিরোদ্ধে ভয়ংকর ভাবে ক্ষুভে বিক্ষোভে মানুষ ফেঁটে পড়ে । যা অভ্যুত্থানে  রূপনেয় । মুনাফা ভিত্তিক ভারতীয় গনমাধ্যম তাদের পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যখন তারা দেখল যে লক্ষাধিক মানুষ ঐক্যদ্ধ হয়ে ধর্মীয় ও জাতিয়তাবাদী উগ্রতার উপর চাবুক মারছে তখন  তারা এক প্রকার অপরাধমূলক নিরবতা পালন করেছে ।

 যখন ১১টি প্রধান ট্রেড ইউনিয়নের ফেডারেশন জেগে উঠেছে, সাধারণ ধর্মঘট পালন করেছে, তখন সকল গন মাধ্যমেরই টনক নড়ে এবং তবে সাধারণ ধর্মঘট সর্ম্পকে নেতিবাচক প্রচারই বেশী চালিয়েছে তারা। বাম রাজনৈতিক সংশয়বাদী  ও সাইনিক রাজনৈতিকগন গন মাধ্যমকে তাদের সহযোগী হিসাবে পেয়েছে এবং তথাকথিত স্বাধিন বিশ্বের গনমাধ্যম গুলোও তাদের সাথে যোগদেয় এবং এই ধর্মঘটকে ব্যর্থ বলে আখ্যায়িত করে। যদিও এই ধর্মঘট সমগ্র ভারতকে অচল করে দিতে পারেনি, তবু ইহা ছিল এযাবৎ কালের ভারতীয় শ্রমিক শ্রেনীর প্রকৃত সমস্যা নিয়ে এক মহান আন্দোলনের বহিপ্রকাশ।

আন্দোলনকারীদের মনোবলে ভাঙ্গন , জন সাধারণের মধ্যে বিভক্তি আরোপ, কোন প্রকার শেণী গত অনৈক্য সৃষ্টি করতে বা বাঁধার সৃষ্টি করতে পারেনি । গুরুদাস দাসগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়নস কংগ্রেস (অওঞটঈ) (ইহা কমিউনিষ্ট পার্টিরসাথে সর্ম্পকযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন),তিনি ২৮শে ফেব্র“য়ারীর সাধারণ ধর্মমঘট  সর্ম্পকে মন্তব্য করেন যে, “ইহা একটি ঐতিহাসিক মুর্হুত, এটাই ভারতে প্রথম সর্ববৃহৎ ঘটনা যে, সকল বড় বড় শ্রমিক ফেডারেশন গুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে সরকারের শ্রমনীতি বিরোধী সংগ্রাম করছে”। কয়েক জন শ্রমিক র্কমর্কতার  ভাষ্যমতে, প্রায় ১০০ মিলিয়ন শ্রমিক এই আন্দোলনে যোগদান করেছেন । নূন্যতম জাতীয় মজুরী ঘোষনা, প্রায় পাঁচ কোটি শ্রমিকের স্থায়ী চাকুরীর নিশ্চয়তা, সা¤প্রতিক কালে শ্রমিকদের জীবন যাত্রার মান কমে যাওয়া ও বেসরকারী করন নীতির অবসান ঘটাতেই এই ধর্মঘট । এএফপি সংবাদ দিয়েছে যে, সমগ্র পরিবহন, ব্যাংক-বীমা, ডাক যোগাযোগ এবং সকল সরকারী খাতের প্রতিষ্ঠান সমূহ বন্ধ ছিল । ভরতের ব্যবসা বানিজ্যের  প্রাণ কেন্দ্র  মুম্বাইয়ের সামপ্রতিক ইতিহাসে এটাই ছিল সবছেয়ে বড় ধর্মঘট ।

শ্রমজীবি মানুষের নিচের স্তর থেকে এমন চাপ ছিল যে, শ্রমিক ইউনিয়ন ও শ্রমিক ফেডারেশন নেতৃবৃ›দ্ব বাধ্য হয় সাধারণ ধর্মঘট ডাকতে, সফল করতে এবং তাদের সংশোধনবাদ ও সংস্কার মূলকনীতির বিপরীতে আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিনতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ।  এমন কি ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেসের সাথে সম্পর্ক যুক্ত শ্রমিক ইউনিয়ন (ওঘঞটঈ) ও ধর্মঘটে যোগদান করে । ইহার প্রেসিডেন্ট জি, সন্জিব রেড্ডী  বলেন যে, আমাদের ও প্রধান দাবী হলো চুক্তি ভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ বাতিল করন, এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি রোধ করা। কোন কোন শহরে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সর্ম্পক যুক্ত শ্রমিক সংগঠন সমূহ ও ধর্মঘটে যোগদান করেছে । যদিও ক্ষমতাসিন কংগ্রেস ও তার প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ধর্মঘটের তিব্র বিরোধিতা করে ।

কমিউনিষ্ট পর্টির নেতাগন নি:শর্তভাবে পুজিঁবাদী চক্রের নিকট আত্মসর্মপন করে বসে আছেন । এই বামপন্থী নেতা গন সর্ম্পূণরূপে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পথ পরিহার করেছেন । তারা দুই স্তরবিশিষ্ট বিপ্লবের পথ ত্যাগ করেছেন । তারা এখন একস্তর বিশিষ্ট বিপ্লবের পথে গভীর ভাবে বিশ্বাসী । যেমন ঃ- বুর্জোয়া গনতন্ত্রের  । তারা সরাসরি বিদেশী বিনিয়েগের পন্থায় বিশ্বাসী ও আগ্রহী, সে ক্ষেত্রে উৎসাহ উদ্দিপনা দিতে  বদ্বপরিকর যেন বহুজাতিক কোম্পানী গুলো তাদের যতেচ্ছা কর্মকান্ডের কারণে নিন্দিত ও পরাজিত হয় । যেমনটি হয়েছে পশ্চিম বঙ্গ ও অন্যান্য এলাকায় ।

পুরাতন ধারার এই নেতাদের ছলচাতুরি র্পুন কৌশল প্রয়োগ, ভারতীয় শ্রমিক শ্রেণীকে তাদের ঐতিহাসিক মঞ্চে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করেছে । কমিউনিষ্ট পার্টির তরুন ও যুব কর্মীদেও মাঝে বিভ্রান্তি ও মাওবাদী বিদ্রোহীদের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে । কিন্তু এই গেড়িলা যুদ্ধের কৌশল বিশাল রাষ্ট্রকে পরাজিত করতে পারবে না । তবে রাজনৈতিক হঠকারিতা ও সুবিধাবাদ একই মূদ্রার এপিট ওপিট । কিছু মাওবাদী নেতার পশ্চিমবঙ্গের চরম ডান পন্থী  মমতা ব্যানারজীকে সমর্থন করা তাদের আদর্শিক দোউলিয়াত্বকেই প্রকাশ করল । এবং বিপ্লবে বিশ্বাসী যুব সমাজকে চরম ভাবে আশাহত করল ।

বিগত ৬৫ বছরে, জাপানের চেয়ে ও বেশী বিলিয়নিয়ার  অধ্যুষিত হওয়া সত্বেও ভারতীয় শাসক গৌষ্ঠি জাতীয় গনতান্ত্রিক বিপ্লব সাধনের কাজটি করতে সম্পূর্নভাবেই ব্যর্থ হয়েছে । ইহা এক জ্বাজল্যমান ঐতিহাসিক র্ব্যথতা । ইহাকে অস¦ীকার করার কোন উপায় নেই । পুজিঁবাদের অধীনে ভারতীয় জনগণে সামনে এগোবার কোন পথ খোলা নেই । অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধি ইতিমধ্যে সংকুচিত হতে শূরু করেছে । সাধারণ জনগণের র্আথ-সামাজিক অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। কমিউনিষ্ট পার্টি গুলোকে অবশ্যই ভারতে বিপ্লবের বৈশিষ্ঠ হিসাবে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে গ্রহন করতে হবে । যা এই অঞ্চলের সর্বত্র সম্প্রসারিত হবে এবং দক্ষিন এশিয়ায় একটি সমাজতান্ত্রিক ফেডারেশন গঠনে সহায়ক হবে । যদি তা তারা করতে ব্যর্থ হন তবে তরুন সমাজ, ও শক্তিশালী শ্রমিক শ্রেণী এবং সাধারণ জনগন ঐ সকল নেতাদেরকে বাদ দিয়ে তারা নতুন মার্ক্সীয় নেতৃত্ব গড়ে তুলবেন এবং ঐতিহাসিক প্রয়োজন পুরনে বিপ্লবী পদক্ষেপে এগিয়ে আসবেন । অন্যরকম ভারতের নিপিড়িত শোষিত শ্রমিক,যুবক,এবং কৃষক শ্রেনী আবার জেগে উঠেছে ।