রাশিয়া কেন ষ্ট্যালিনীয় একনায়কতন্ত্রের মধ্যদিয়ে একটি সর্বগ্রাসী অধপতনে গেল ? এবং

Bengali translation of Youth for International Socialism FAQ on Stalinism.

রাশিয়া কেন ষ্ট্যালিনীয় একনায়কতন্ত্রের মধ্যদিয়ে একটি সর্বগ্রাসী অধপতনে গেল ? এবং

একটি পরিকল্পিত অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রন ছাড়া উৎপাদক শ্রেণী কিভাবে বিকশিত হতে পারে?

ওয়াই,এফ,আই,এস থেকে বাংলায় অনুবাদ : একেএম শিহাব

সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মান প্রক্রিয়াটি বুঝার জন্য, এবং  কেন ইহা এখন ও  সফলতা র্অজন করতে পারেনি, তার জন্য আমাদেরকে একটি  বিজ্ঞানসম্মত জবাব খোঁজতে হবে । দেখতে হবে সোভিয়েত ইউনিয়নে কি ঘটেছিল ? এই বিষয়ে অনলাইনে একটি আস্ত বই প্রকাশিত হয়েছে । এর শিরোনাম হলো রাশিয়িা : বিপ্লব থেকে প্রতিবিপ্লব । এর ঘটনা প্রবাহের একটি সংক্ষিপ্তরূপ নিম্নে দেয়া হলো :-

সর্ববাগ্রে রাশিয়ার বিপ্লব সম্পকে আমাদের ঐতিহাসিক মূল্যায়ন হলো অত্যন্ত  ইতিবাচক । এই বিপ্লব ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মত একটি উদাহরণ যে, ভূ-সম্পত্তির মালিক, পুজিঁপতি,এবং ব্যাংকারদের সহায়তা ছাড়াই কেবলমাত্র কৃষক-শ্রমজিবী মানুষ একটি একটি রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনা করতে সক্ষম । এতে পুজিঁবাদি নৈরাজ্যকর উৎপাদন ব্যবস্থার উপর পরিকল্পিত অর্থনীথির প্রাধান্য ও প্রমানিত হয় । ইহা শুধু ধারণা গত ছিলনা বরং তা ছিল ভরবাস্তব । ইহা শিল্প উন্নয়ন, জীবন য়াত্রার মান, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি, ও শ্ক্ষিাক্ষেত্রে পভুত উন্নতি সাধন করে । মোটকথা রাশিয়া একটি পশ্চাদপদ দেশ হয়েও অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সম্রাজ্যবাদের প্রভাব মুক্ত হয়ে পৃথিবীর একটি প্রথম সারির শিল্পায়িত অর্থনেতিক ও সামরিক শক্তিতে পরিনত হয়। আর এটা সম্ভব হয় শুধু মাত্র একটি পরিকল্পিত অর্থনীতি গ্রহন করার কারণেই । আপনি যদি তৎকালিন একটি পশ্চাদপদ পুজিবাদি দেশের দিকে থাকান তাহলে বিগত ৮০ বছরে তাদের পরির্বতনের ধারাটা বুঝতে পারবেন । সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, আপনি দেখতে পাবেন সেটি আগের অবস্থাই পশ্চাদপদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রভাবাধীন রয়েগেছে । আপনি উদাহরণ হিসাবে ভারত,পাকিস্তান,বাংলাদেশ,ফিলিপাইন এবং উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর কথা উল্যেখ করতে পারেন ।

কিন্তু একই সাথে আমাদেরকে এটাও ব্যাখ্যা করতে হবে যে, কেন ষ্ট্যালীনীয় রাষ্ঠ্রটি তাদের বিপুল সম্ভানা সহ পরিকল্পিত অর্থনেতিক ব্যবস্থা সত্বে ও ১৯৮০ সালের শেষের দিকে সংকটে নিপতিত হয়; এবং ১৯৯০ সালের সূচনাতেই ধসে পড়ে । আমরা মনে করি, পরিকল্পিত অর্থব্যবস্থার ঊপর গনতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রনের অভাব ই এর প্রধান কারণ । পুজিঁবাদী অর্থব্যবস্থায়, বাজার বহুমাত্রিকভাবে অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রন করে । আপনি যদি একটি জুতা তৈরীর খারখানার মালিক হন, আপনার উৎপদিত জুতার গুনগতমান যদি কম হয় এবং বাজারের অন্যান্য জুতার তুলনায় যদি দাম বেশী পড়ে, তবে আপনার কারখানাটি দেউলিয়া হয়ে পড়ার সম্ভাবনা । আপনি যদি এমন কোন আর্থিক খাতে বিনিয়োগ করেন, যে খাতে ইতোমধ্যে অতিরিক্ত উৎপাদন বিরাজ করছে, এক্ষেত্রে ও অপনার দেউলিয়া হয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রচুর । (দক্ষিন এশিয়ায় কম্পিউটার ও গাড়ী তৈরীর কারখানায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে)

যদি ও বাজার একটি নৈরাজ্যিক এবং ধ্বংসাত্মক চক্রের ভেতর দিয়ে চলে, তবু ইহা অনেক ক্ষেত্রেই উৎপাদক শক্তির উপর নিয়ন্ত্রনের ভুমিকা পালন করে থাকে । (গুটি কয়েক বহুজাতিক কোম্পানীর হাতে নিয়ন্ত্রন থাকায় অর্থনীতিতে তা কিছুটা কমানো হয়েছে )। এইরূপ অবস্থা পরিকল্পিত অর্থনীতিতে চিন্তাই করা যায় না । একটি পরিকল্পিত অর্থনীতিতে একমাত্র শ্রমিক শ্রেনীর গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অংশ গ্রহনের মাধ্যমেই এইরূপ নিয়ন্ত্রন সম্ভব হতে পারে (উৎপাদক এবং ভুক্তাগণ মিলিত ভাবে)। একজন উৎপাদক কর্মীর চেয়ে তার প্রতিবেশীর চাহিদা সম্পর্কে  আর কে বেশী জানতে পারবে ? কারখানার ব্যাবস্থা সম্পর্কে ও তাদের চেয়ে আর কে বেশী জানবেন ? সোভিয়েত ইউনিয়নে সবচেয়ে বড় সমস্যাই ছিল গনতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি । মুষ্ঠিমেয় কমিউনিষ্ট পার্টি ও সরকারী আমলারাই সকল ক্ষেত্রে খবরদারী ও হস্তক্ষেপ করতেন।

এটা দিবালোকের মত পরিষ্কার, যে অর্থনীতিটি প্রতি বছর প্রায় দশ লক্ষাধিক পন্য উৎপাদন কররছিল,তার উপর শ্রমিক শ্রেনীর কোন প্রকার গনতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রন ছিলনা । প্রশ্ন হলো কেন সোভিয়েত ইউনিয়নে শ্রমিকশ্রেণীর গনতন্ত্র ছিলনা ? বুর্জোয়া সমালোচক গৌষ্ঠী এই জন্যই বলে থাকে যে সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের ফলাফলই হল,“সমাজতন্ত্র গনতন্ত্র বিরোধী যা একনায়কন্ত্রেরই নামান্তর”। এর উত্তরে আমরা বলি, এসব মিথ্যা ও সমাজতন্ত্রের বিরোদ্ধে অসত্য বক্তব্য। 

আপনি যদি লেনিনের রাষ্ট্র ও বিপ্লব নামক বইটি পাঠ করেন তা হলে আপনি বুঝতে পারবেন যে শ্রমিক শ্রেণীর গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার শর্তগুলো তিনি কিভাবে উপস্থাপন করেছেন । ১৮৭১ সালের প্যারিস কমিউনের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি তা ব্যাখা করেছেন । যা ছিল ইতিহাসের সর্বপ্রথম শ্রমিক রাষ্ট্র । এর প্রধান চারটি র্শত ছিল । যেমন :-

১.সরকারে সকল স্তরের র্কমকর্তাগন অবশ্যই জনগনের দ্বারা নির্বাচিত হবেন এবং প্রয়োজনে তাদেরকে অপসারনের অধিকার ও থাকবে ।

২.একজন দক্ষ শ্রমিকের চেয়ে কোন অবস্থাতেই কোন সরকারী র্কমকর্তা বেশী বেতন পাবেন না । মহান র্কাল র্মাকস বলেছেন,“চেতনা নির্ধারিত হয় সমাজের দ্বারা”। অন্যকথায় বলা যায় একজন মানুষ যেভাবে জীবন যাপন করেন তিনি সেভাবেই চিন্ত করেন। সংস্কারের আরো একটি অন্যতম কারণ হলো শ্রমিক সংগ্রামের নেতাদের মধ্যে ও এমন ধারনা আছে যে, তারাও সরকাররের লোক হিসাবে বর্ধিত হারে বেতন পান বলে, তাই তারা মনে করেন “পুজিঁবাদ ততটা খারাপ নয়” ।

৩. কোন প্রকার স্থায়ী সেনাবাহিনী থাকবেনা বরং সাধারণ জনগনের দ্বারাই তৈরী হবে সশস্র বাহিনী ।

৪.নির্ধারিত সময়ান্তে  প্রত্যেক ব্যাক্তিই অর্থনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে পরিচালনার কাজে অংশগ্রহন করতে পারবেন । লেনিনের কথায়, “যদি প্রত্যেকেই আমলা হয়ে যান, তবে আর কেহই আমলা থাকবেন না” ।

এই সকল শর্তাবলীর খুব সাধারণ বিশ্লেষণ ও আমারেকে খুব দ্রুতই এই সিদ্ধন্তে উপনিত হতে সাহায্য করে যে, উক্ত শর্তাবলীর একটি ও সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ায় প্রয়োগ করা হয়নি । কিন্তু কেন? বিপ্লবের প্রথম পর্বে মহান লেনিন ও তাঁর সহযোগীগন বিপ্লবের মধ্যদিয়ে এযাবৎ কালের সর্বোত্তম গনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করতে ছেয়েছিলেন । সোভিয়েত (কৃষক ও শ্রমিকদের পর্ষদগুলোকে) রাষ্ট্র ও অর্থনীতিকে তাদের অংশগ্রহনের মাধ্যমে পরিচালনা করে ছিলেন । সকল প্রকার রাজনৈতিক দল গুলোকে সোভিয়েত নির্বাচনে, যে কোন প্রকারের বিতর্ক এবং তাদের মতামত উপস্থাপন করতে সুযোগ পদান করে ছিলেন । ইহা প্রায় সকলের ই জানা ছিল যে, প্রথম সোভিয়েত সরকার ছিল বলশেভিক পার্টি এবং অন্যান্য বিপ্লবী বাম দলগুলোর জোট সরকার । সেই সময়কার একটি মাত্র দলকে সোভিয়েত ব্যাবস্থার বিরোদ্ধে অস্র ধারনের অপরাধে রাজনীতি করার অনুমোদন দেয়া হয়নি ।

কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে ও ব্যাপক গনতন্ত্রের চর্চা ছিল । জার্মানীর  সাথে ইৎবংঃ-খরঃড়াড়ংশ শান্তি চুক্তি আলোচনার সময় কমিউনিষ্ট পার্টির ভেতরেই কমপক্ষে ভিন্ন মতাবলম্বী  তিনটি গ্র“প ছিল । যার একটির নেতৃত্বে ছিলেন বুখারীন । দৈনিক পত্রিকা দি কমিউনিষ্ট এ লেনিন এর বক্তব্যের বিপরীতে তারা সমালোচনামূলক একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেন । প্রশ্ন হলো তা হলে, এরূপ একটি গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কি করে একনায়কতন্ত্রে  রূপান্তর হলো ।

লেনিন রাষ্ট্র ও বিপ্লব নামক গ্রন্থে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্টার বিষয় শুধু নয় বরং অর্থনৈতিক পূর্বশর্তসমূহের প্রশ্নগোলো ও আলোচনা করেছেন । একটি গনতান্ত্রিক পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হলে সকলের জন্য বিপুলভাবে উৎপাদনের বস্তুগত বিষয়াবলীর পরিস্থতি বিরাজমান থাকতে হবে । কোথাও নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের অভাব দেখা দিলে অবশ্যই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কর্তৃত্ব সহকারে দুর্লভ পণ্যটি সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে হয় । রাশিয়ার ঊৎপাদন ব্যবস্থা বিশ্লেষন করলে সহজেই বলে দেয়া যায় যে, ১৯১৭ সালে রাশিয়া সমাজতন্ত্রের জন্য উপযোগী ছিলনা ।

তাহলে বলশেভিকরা কেন সেই সময় রাশিয়াতে বিপ্লব করেছিলেন ? তাদের উদ্দেশ্য ছিলনা যে, শুধুমাত্র রাশিয়াতে সমাজতন্ত্র কায়েম করা বরং তারা রাশিয়াকে দেখেছিলেন বৃহত্তর ইউরোপে বিপ্লব সাধনের সূচনা হিসাবে। তারা চিন্তা করেছিলেন যে, শ্রমিক শ্রেনীর দ্বারা রাশিয়ায় ক্ষমতায় আরোহন সমগ্র ইঊরোপে বিপ্লবী আন্দোলনের ঢেঊ ছড়িয়ে পড়বে ।

ইউরোপে শ্্রমিক শ্রেণীর ক্ষমতায় আরোহন পশ্চাদপদ রাশিয়াতে দ্রুত উন্নয়নে বস্তুগত সহায়তা প্রদান করবে এবং প্রকৃত পক্ষেই রাশিয়ার বিপ্লব ইউরোপে গনবিপ্লবের জোয়ার এনে দেয় । ১৯১৮-১৯১৯ সালে র্জামান বিপ্লব,দি হাঙ্গেরিয়ান সোভিয়েত রিপাবলিক,স্পেনের বিপ্লবী সাধারণ ধর্মঘট, ইটালরি কারখানা দখলএবং শ্রমিক শ্রেণীর উদ্দোগে সমগ্র মহাদেশ জুড়ে গন আন্দোলন ইত্যাদী । কিন্তু র্দুভাগ্যবশত: এই সমস্ত কর্মকান্ডই  ব্যার্থ হয়ে যায়।  

এই র্ব্যাথতার বহু কারণ বিদ্যমান ছিল । তা স্বল্প কথায় বলা সম্ভব নয় । শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলন স্যোসাল ডেমক্রেটিক সংশোধন বাদী নেতাদের দ্বারা ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত ছিল । তখন কমিউনিষ্টদের হাতে যতেষ্ঠ সময় ছিলনা  এইরূপ আন্দোলনকে সংগঠিত করার । ফলে অনির্বায ভাবেই আন্দোলনে মারাত্মক কিছু ত্র“টি থেকে যায়। এই সকল ঘটনা প্রবাহের ফলে রাশিয়ার বিপ্লব বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে । অনগ্রসর,কৃষি প্রধান কৃষক অধ্যুষিত দেশটি প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ  দ্বারা ধ্বংস প্রাপ্ত হয় । এত কিছুর পরও সঠিক ভবেই ঠিকে ছিল তারা, কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই, আবার গৃহ যুদ্ধের সমরচক্র দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং প্রতি বিপ্লব সংঘটিত হয়, আক্রমণ চালায়  ২১নং বিদেশী আর্মী যারা সোভিয়েতগুলোকে ধ্বংস করার প্রচেষ্ঠা চালায় এবং তারা অনেক ক্ষেত্রে সফল ও হয় ।

যাইহোক, অবশেষে রেড আর্মী যুদ্ধে বিজয় লাভ করে । কিন্তু তার জন্য প্রচুর মূল্য দিতে হয়েছে । শুধুমাত্র অর্থনীতিই ধ্বংস প্রাপ্ত হয়নি বরং জনগনকে ও অর্ধাহারে অনাহারে থাকতে হয়েছে । এমনকি অত্যন্ত প্রতিভাবান,বিশ্বস্থ কমিউনিষ্ট বিপ্লবীদেরকে সেই কঠিন সময়ে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে । শ্রমিক শ্রেণীর গনতনন্ত্রের জন্য সাপ্তাহিক কর্মসময় সংক্ষিপ্ত করা প্রয়োজন ছিল, যেন শ্রমিকগন শিক্ষা দীক্ষায়  অংশ গ্রহন করতে পারেন । এবং নিজেদের যোগ্যতা বৃদ্ধি করে রাজনীতি ও সমাজ পরিচালনায়  অংশ গ্রহন করতে পারেন। কিন্তু রাশিয়াতে ছিল এর বিপরীত অবস্থা সাধারন জনগনের জীবন যাত্রার মান ছিল অত্যন্ত নিম্ন মানের অন্যদিকে কর্ম সময় ছিল র্দীঘ । ফলে স্বভাবিকভাবেই সোভিয়েতে শ্রমিকদের অংশগ্রহন ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং আমলাতান্ত্রিক একটি র্কমকর্তা শ্রেণীর উত্থান ঘটতে থাকে। যা ক্রমে শ্রমিকদেরকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে থাকে অর্থাৎ শ্রমিকদেরকে বিরাজনৈতিক অবস্থার দিকে ঠেলে দেয় ।

মহান লেনিন তার সর্বশেষ লেখায় আমলাতন্ত্র সর্ম্পকে সবিশেষ সর্তক করে ছিলেন । যাহা অনেক বছর ষ্ট্যালিনের দখলে গোপনীয় অবস্থায় ছিল কিন্তু তার সুকঠিন  আমলাতান্ত্রিক শাসন আমলে তাতে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করা সম্ভব ছিলনা। সেই সময়ে ও কমিউনিষ্ট পার্টির নেতৃত্ব পর্যায়ের একটি বিরাট অংশ এই পরিস্থিতির বিরোধী  ছিলেন । কিন্তু বাস্তব কারনেই পার্টির ভেতর থেকে গড়ে উঠা আমলাতন্ত্রকে উচ্ছেদ করা সম্ভব ছিলনা ।  আমরা যদি ১৯১৭ সালের মহান অক্টোবর বিপ্লবের নেতাদের দিকে থাকাই তাহলে দেখতে পাব যারা লেেিনন পাশে থেকে বিপ্লব করে ছিলেন ১৯৪০ সালে একমাত্র ষ্ট্যালিন ছাড়া আর কেহ ই জীবিত ছিলেন না। অন্যানদের প্রায় সকলেই ষ্ট্যালিনের হাতে গুলিবিদ্ব হয়ে মারা যান । অথবা কারাগারে, লেবার ক্যাম্পে মারা য়ান, অথবা নিখোঁজ হন চিরতরে । তাঁদের খুব অল্প সংখ্যকই মারা গেছের বার্ধক্য জনিত কারনে । ন্যায়বান, বিশ্বস্থ হাজার হাজার কমিউনিষ্টকে হত্যা করা হয় অথবা মারা যান ষ্ট্যালিনের কুখ্যাত কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে । দ্ষ্টু আমলাতান্ত্রিকতার বিরোদ্ধে সবচেয়ে যিনি সরব ছিলেন তিনি হলেন লিয়ন ট্রটস্কি । যিনি অক্টোবর বিপ্লবে লেনিনে সাথে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং পরর্বতীতে লাল ফৌজ সংগঠিত করেছিলেন ।

রাশিয়ার পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, ট্রটস্কির মত একজন মহান বিপ্লবী ও বিশাল ব্যক্তিত্বের অধিকারী ব্যাক্তি ও নিজেকে বহু বছর কমিউনিষ্ট আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন । বিশেষ করে যারা শর্তহীনভাবে ও অবলীলায় ষ্ট্যালিনীয় আমলাতন্ত্রের জোয়ালে মাথা ডুকিয়ে রেখেছিল তাদের কাছ থেকে। আর সেই কারনেই পরবর্তীতে সমাজতন্ত্রিক আন্দোলনে তিনি প্রাসঙ্গীক হয়ে উঠেন । উদাহরণ হিসাবে বলা যায় দক্ষিণ আফ্ররিকার কমিউনিষ্ট পাটির্র (সাবেক ষ্ট্যালিনিষ্ট) বিগত কংগ্রেসে  তাদের কমরেডদেরকে ট্রটস্কির লিখা বই পত্র বিশেষ ভাবে অধ্যয়নের আহবান জানায় । একজন কমিউনিষ্ট কেবলমাত্র মুক্তমন সহকারে বন্ধুত্বর্পূণ পরিবেশে বিতর্ক ও যুক্তির মাধ্যমে শিখতে পারেন কিভাবে ষ্ট্যালিনিজমের উত্থান ও বিকাশ ঘটেছিল? 

রাশিয়া কেন ষ্ট্যালিনীয় একনায়কতন্ত্রের মধ্যদিয়ে একটি সর্বগ্রাসী অধপতনে গেল ? এবং

একটি পরিকল্পিত অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রন ছাড়া উৎপাদক শ্রেণী কিভাবে বিকশিত হতে পারে?

ওয়াই,এফ,আই,এস থেকে বাংলায় অনুবাদ : একেএম শিহাব

সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মান প্রক্রিয়াটি বুঝার জন্য, এবং  কেন ইহা এখন ও  সফলতা র্অজন করতে পারেনি, তার জন্য আমাদেরকে একটি  বিজ্ঞানসম্মত জবাব খোঁজতে হবে । দেখতে হবে সোভিয়েত ইউনিয়নে কি ঘটেছিল ? এই বিষয়ে অনলাইনে একটি আস্ত বই প্রকাশিত হয়েছে । এর শিরোনাম হলো রাশিয়িা : বিপ্লব থেকে প্রতিবিপ্লব । এর ঘটনা প্রবাহের একটি সংক্ষিপ্তরূপ নিম্নে দেয়া হলো :-

সর্ববাগ্রে রাশিয়ার বিপ্লব সম্পকে আমাদের ঐতিহাসিক মূল্যায়ন হলো অত্যন্ত  ইতিবাচক । এই বিপ্লব ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মত একটি উদাহরণ যে, ভূ-সম্পত্তির মালিক, পুজিঁপতি,এবং ব্যাংকারদের সহায়তা ছাড়াই কেবলমাত্র কৃষক-শ্রমজিবী মানুষ একটি একটি রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনা করতে সক্ষম । এতে পুজিঁবাদি নৈরাজ্যকর উৎপাদন ব্যবস্থার উপর পরিকল্পিত অর্থনীথির প্রাধান্য ও প্রমানিত হয় । ইহা শুধু ধারণা গত ছিলনা বরং তা ছিল ভরবাস্তব । ইহা শিল্প উন্নয়ন, জীবন য়াত্রার মান, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি, ও শ্ক্ষিাক্ষেত্রে পভুত উন্নতি সাধন করে । মোটকথা রাশিয়া একটি পশ্চাদপদ দেশ হয়েও অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সম্রাজ্যবাদের প্রভাব মুক্ত হয়ে পৃথিবীর একটি প্রথম সারির শিল্পায়িত অর্থনেতিক ও সামরিক শক্তিতে পরিনত হয়। আর এটা সম্ভব হয় শুধু মাত্র একটি পরিকল্পিত অর্থনীতি গ্রহন করার কারণেই । আপনি যদি তৎকালিন একটি পশ্চাদপদ পুজিবাদি দেশের দিকে থাকান তাহলে বিগত ৮০ বছরে তাদের পরির্বতনের ধারাটা বুঝতে পারবেন । সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, আপনি দেখতে পাবেন সেটি আগের অবস্থাই পশ্চাদপদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রভাবাধীন রয়েগেছে । আপনি উদাহরণ হিসাবে ভারত,পাকিস্তান,বাংলাদেশ,ফিলিপাইন এবং উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর কথা উল্যেখ করতে পারেন ।

কিন্তু একই সাথে আমাদেরকে এটাও ব্যাখ্যা করতে হবে যে, কেন ষ্ট্যালীনীয় রাষ্ঠ্রটি তাদের বিপুল সম্ভানা সহ পরিকল্পিত অর্থনেতিক ব্যবস্থা সত্বে ও ১৯৮০ সালের শেষের দিকে সংকটে নিপতিত হয়; এবং ১৯৯০ সালের সূচনাতেই ধসে পড়ে । আমরা মনে করি, পরিকল্পিত অর্থব্যবস্থার ঊপর গনতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রনের অভাব ই এর প্রধান কারণ । পুজিঁবাদী অর্থব্যবস্থায়, বাজার বহুমাত্রিকভাবে অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রন করে । আপনি যদি একটি জুতা তৈরীর খারখানার মালিক হন, আপনার উৎপদিত জুতার গুনগতমান যদি কম হয় এবং বাজারের অন্যান্য জুতার তুলনায় যদি দাম বেশী পড়ে, তবে আপনার কারখানাটি দেউলিয়া হয়ে পড়ার সম্ভাবনা । আপনি যদি এমন কোন আর্থিক খাতে বিনিয়োগ করেন, যে খাতে ইতোমধ্যে অতিরিক্ত উৎপাদন বিরাজ করছে, এক্ষেত্রে ও অপনার দেউলিয়া হয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রচুর । (দক্ষিন এশিয়ায় কম্পিউটার ও গাড়ী তৈরীর কারখানায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে)

যদি ও বাজার একটি নৈরাজ্যিক এবং ধ্বংসাত্মক চক্রের ভেতর দিয়ে চলে, তবু ইহা অনেক ক্ষেত্রেই উৎপাদক শক্তির উপর নিয়ন্ত্রনের ভুমিকা পালন করে থাকে । (গুটি কয়েক বহুজাতিক কোম্পানীর হাতে নিয়ন্ত্রন থাকায় অর্থনীতিতে তা কিছুটা কমানো হয়েছে )। এইরূপ অবস্থা পরিকল্পিত অর্থনীতিতে চিন্তাই করা যায় না । একটি পরিকল্পিত অর্থনীতিতে একমাত্র শ্রমিক শ্রেনীর গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অংশ গ্রহনের মাধ্যমেই এইরূপ নিয়ন্ত্রন সম্ভব হতে পারে (উৎপাদক এবং ভুক্তাগণ মিলিত ভাবে)। একজন উৎপাদক কর্মীর চেয়ে তার প্রতিবেশীর চাহিদা সম্পর্কে  আর কে বেশী জানতে পারবে ? কারখানার ব্যাবস্থা সম্পর্কে ও তাদের চেয়ে আর কে বেশী জানবেন ? সোভিয়েত ইউনিয়নে সবচেয়ে বড় সমস্যাই ছিল গনতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি । মুষ্ঠিমেয় কমিউনিষ্ট পার্টি ও সরকারী আমলারাই সকল ক্ষেত্রে খবরদারী ও হস্তক্ষেপ করতেন।

এটা দিবালোকের মত পরিষ্কার, যে অ

একদেশে সমাজতন্ত্র কেন অসম্ভব...

প্রথমত: সমাজতন্ত্র উদৎপাদন ব্যবস্থার সর্বোচ্চ বিকাশের স্তরের উপর সর্বোতভাবে নির্ভরশীল । সমাজতন্ত্রের সর্ব নিম্ন স্তর হলো পুজিঁবাদের সর্বোচ্চ স্তর । সম্পদের অসম বন্ঠনের কারণে বর্তমান বিশ্বে বহু সমস্যা বিরাজমান । তার একমাত্র সমাধানই হলো সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং  মানুষ মানুষ কে শোষন করবেনা এই নীতির ভিত্তিতে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিলিবন্ঠনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা । মাক্র্স,এ্েঙ্গলস,লেনিন এবং ট্্রটস্কির কোন লেখায় আপনি কোথাও খোঁজে পাবেন না যে, তাঁরা কোন একটিমাত্র দেশে সমাজতন্ত্র কায়েমের ধারনা উত্থাপন করেছেন । ষ্টালিনের জাতিয়তাবাদী চিন্তায় একদেশে সমাজতন্ত্রের ধারনাটি এসেছে । যা ছিল সম্পুর্ণভাবেই অমার্ক্সীয় । অথচ মার্ক্সবাদ হলো সেই মতবাদ যা সবসময় আর্ন্তজাতিকতাবাদের দৃষ্টিভঙ্গি পোষন করে ।

এই শতাব্দীতে শ্রমিকশ্্েরণীর প্েক্ষ সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরের অনেক সুযোগ এসেছিল এবং বিভিন্ন দেশে চেষ্টাও করেছে । তবে শুধুমাত্র একটিতে সফল হয়েছে,  ১৯১৭ সালে রাশিয়ার বিপ্লবে এবং তা ও ছিল সাময়িক । বিপ্লবটি সফলতা পায় অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দেশে । ্প্রায় ১০০০ বছরের পুরাতন জার একনায়কতন্ত্রের নির্মমতার পতন ঘটায় বিপুল সাফল্যের সাথে । এর পর শ্রমিকশ্রেণী সমগ্র সমাজ ব্যবস্থাটাকে করায়ত্ব করার প্রচেষ্টা চালায় । তবে মহান লেনিনের শুধুমাত্র একদেশে সমাজতন্ত্র কায়েম করার উদ্দেশ্য বা অভিপ্রায় ছিল না ।  মূলত: ইহা হলো একটি অসম্ভব ব্যপার, কেননা সমাজতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন সমাজের চাহিদার আলোকে পর্যাপ্ত উৎপাদন ব্যবস্থার নিশ্চয়তা । এর জন্য প্রয়োজন হলো আর্ন্তজাতিক পরিসম্পদের আহরন করার ব্যবস্থা থাকা। আর এর জন্যই কোন একটিমাত্র দেশে সমাজতন্ত্রকে পুজিঁবাদের উপর বিজয়ী করা মোটেই যথেষ্ট নয়।  বিপ্লবকে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে, এমনকি সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি দেশে ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিচ্ছিন্নতা,পশ্চাদপদতা,গৃহযুদ্ধ,বিদেশী হস্তক্ষেপ এবং আর্মিস-২১ এর হামলার ফলে রাশিয়ার বিপ্লব একটি গতিহীনতার বেড়াজালে আটকে যায় । অর্থনৈতিকভাবে আরো অনেক অগ্রসর ইউরূপের দেশগুলোর বিপ্লবী সহায়তা ছাড়া রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের স্থায়ীত্ব সম্ভব নয় । যদি ইউরূপের অন্যান্য দেশে বিপ্লব সাফল্য পেত তবে তারা তাদের প্রযুক্তি,প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনশক্তি কে একত্রিত করে বিপুল সাফল্যের সাথে দুনিয়ার বাকী অংশে বিপ্লবকে ছড়িয়ে দিতে পারত । কিন্তু ভিন্ন বাস্তবতায়, বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি আমলাতান্ত্রিক একনায়কত্বের অন্ধকুপে ডুবে গেল মেহনতী মানুষের মহান বিপ্লব। তাই, সমাজতন্ত্রের জন্য লড়াই সংগ্রাম অবশ্যই আর্ন্তজাতিক হতে হবে ।

নোট :আমরা জানি মার্ক্সীয় ব্যাখ্যা অনুসারে অর্থনীতিতে পুঁজির প্রভাব র্সাবজনীন । ইহা কোন একটি দেশে আটকে থাকে না । ছড়িয়ে পড়ে র্সবত্র । উদাহরণ হিসাবে বলা যায় একটি পানি ভর্তি পুকুরের একটি মাত্র কোনাকে যেমন লাল রংগে রঙ্গিন করা সম্ভব নয়, তেমনি একেদেশে সমাজতন্র ও অসম্ভব ।

র্থনীতিটি প্রতি বছর প্রায় দশ লক্ষাধিক পন্য উৎপাদন কররছিল,তার উপর শ্রমিক শ্রেনীর কোন প্রকার গনতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রন ছিলনা । প্রশ্ন হলো কেন সোভিয়েত ইউনিয়নে শ্রমিকশ্রেণীর গনতন্ত্র ছিলনা ? বুর্জোয়া সমালোচক গৌষ্ঠী এই জন্যই বলে থাকে যে সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের ফলাফলই হল,“সমাজতন্ত্র গনতন্ত্র বিরোধী যা একনায়কন্ত্রেরই নামান্তর”। এর উত্তরে আমরা বলি, এসব মিথ্যা ও সমাজতন্ত্রের বিরোদ্ধে অসত্য বক্তব্য। 

আপনি যদি লেনিনের রাষ্ট্র ও বিপ্লব নামক বইটি পাঠ করেন তা হলে আপনি বুঝতে পারবেন যে শ্রমিক শ্রেণীর গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার শর্তগুলো তিনি কিভাবে উপস্থাপন করেছেন । ১৮৭১ সালের প্যারিস কমিউনের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি তা ব্যাখা করেছেন । যা ছিল ইতিহাসের সর্বপ্রথম শ্রমিক রাষ্ট্র । এর প্রধান চারটি র্শত ছিল । যেমন :-

১.সরকারে সকল স্তরের র্কমকর্তাগন অবশ্যই জনগনের দ্বারা নির্বাচিত হবেন এবং প্রয়োজনে তাদেরকে অপসারনের অধিকার ও থাকবে ।

২.একজন দক্ষ শ্রমিকের চেয়ে কোন অবস্থাতেই কোন সরকারী র্কমকর্তা বেশী বেতন পাবেন না । মহান র্কাল র্মাকস বলেছেন,“চেতনা নির্ধারিত হয় সমাজের দ্বারা”। অন্যকথায় বলা যায় একজন মানুষ যেভাবে জীবন যাপন করেন তিনি সেভাবেই চিন্ত করেন। সংস্কারের আরো একটি অন্যতম কারণ হলো শ্রমিক সংগ্রামের নেতাদের মধ্যে ও এমন ধারনা আছে যে, তারাও সরকাররের লোক হিসাবে বর্ধিত হারে বেতন পান বলে, তাই তারা মনে করেন “পুজিঁবাদ ততটা খারাপ নয়” ।

৩. কোন প্রকার স্থায়ী সেনাবাহিনী থাকবেনা বরং সাধারণ জনগনের দ্বারাই তৈরী হবে সশস্র বাহিনী ।

৪.নির্ধারিত সময়ান্তে  প্রত্যেক ব্যাক্তিই অর্থনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে পরিচালনার কাজে অংশগ্রহন করতে পারবেন । লেনিনের কথায়, “যদি প্রত্যেকেই আমলা হয়ে যান, তবে আর কেহই আমলা থাকবেন না” ।

এই সকল শর্তাবলীর খুব সাধারণ বিশ্লেষণ ও আমারেকে খুব দ্রুতই এই সিদ্ধন্তে উপনিত হতে সাহায্য করে যে, উক্ত শর্তাবলীর একটি ও সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ায় প্রয়োগ করা হয়নি । কিন্তু কেন? বিপ্লবের প্রথম পর্বে মহান লেনিন ও তাঁর সহযোগীগন বিপ্লবের মধ্যদিয়ে এযাবৎ কালের সর্বোত্তম গনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করতে ছেয়েছিলেন । সোভিয়েত (কৃষক ও শ্রমিকদের পর্ষদগুলোকে) রাষ্ট্র ও অর্থনীতিকে তাদের অংশগ্রহনের মাধ্যমে পরিচালনা করে ছিলেন । সকল প্রকার রাজনৈতিক দল গুলোকে সোভিয়েত নির্বাচনে, যে কোন প্রকারের বিতর্ক এবং তাদের মতামত উপস্থাপন করতে সুযোগ পদান করে ছিলেন । ইহা প্রায় সকলের ই জানা ছিল যে, প্রথম সোভিয়েত সরকার ছিল বলশেভিক পার্টি এবং অন্যান্য বিপ্লবী বাম দলগুলোর জোট সরকার । সেই সময়কার একটি মাত্র দলকে সোভিয়েত ব্যাবস্থার বিরোদ্ধে অস্র ধারনের অপরাধে রাজনীতি করার অনুমোদন দেয়া হয়নি ।

কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে ও ব্যাপক গনতন্ত্রের চর্চা ছিল । জার্মানীর  সাথে ইৎবংঃ-খরঃড়াড়ংশ শান্তি চুক্তি আলোচনার সময় কমিউনিষ্ট পার্টির ভেতরেই কমপক্ষে ভিন্ন মতাবলম্বী  তিনটি গ্র“প ছিল । যার একটির নেতৃত্বে ছিলেন বুখারীন । দৈনিক পত্রিকা দি কমিউনিষ্ট এ লেনিন এর বক্তব্যের বিপরীতে তারা সমালোচনামূলক একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেন । প্রশ্ন হলো তা হলে, এরূপ একটি গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কি করে একনায়কতন্ত্রে  রূপান্তর হলো ।

লেনিন রাষ্ট্র ও বিপ্লব নামক গ্রন্থে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্টার বিষয় শুধু নয় বরং অর্থনৈতিক পূর্বশর্তসমূহের প্রশ্নগোলো ও আলোচনা করেছেন । একটি গনতান্ত্রিক পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হলে সকলের জন্য বিপুলভাবে উৎপাদনের বস্তুগত বিষয়াবলীর পরিস্থতি বিরাজমান থাকতে হবে । কোথাও নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের অভাব দেখা দিলে অবশ্যই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কর্তৃত্ব সহকারে দুর্লভ পণ্যটি সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে হয় । রাশিয়ার ঊৎপাদন ব্যবস্থা বিশ্লেষন করলে সহজেই বলে দেয়া যায় যে, ১৯১৭ সালে রাশিয়া সমাজতন্ত্রের জন্য উপযোগী ছিলনা ।

তাহলে বলশেভিকরা কেন সেই সময় রাশিয়াতে বিপ্লব করেছিলেন ? তাদের উদ্দেশ্য ছিলনা যে, শুধুমাত্র রাশিয়াতে সমাজতন্ত্র কায়েম করা বরং তারা রাশিয়াকে দেখেছিলেন বৃহত্তর ইউরোপে বিপ্লব সাধনের সূচনা হিসাবে। তারা চিন্তা করেছিলেন যে, শ্রমিক শ্রেনীর দ্বারা রাশিয়ায় ক্ষমতায় আরোহন সমগ্র ইঊরোপে বিপ্লবী আন্দোলনের ঢেঊ ছড়িয়ে পড়বে ।

ইউরোপে শ্্রমিক শ্রেণীর ক্ষমতায় আরোহন পশ্চাদপদ রাশিয়াতে দ্রুত উন্নয়নে বস্তুগত সহায়তা প্রদান করবে এবং প্রকৃত পক্ষেই রাশিয়ার বিপ্লব ইউরোপে গনবিপ্লবের জোয়ার এনে দেয় । ১৯১৮-১৯১৯ সালে র্জামান বিপ্লব,দি হাঙ্গেরিয়ান সোভিয়েত রিপাবলিক,স্পেনের বিপ্লবী সাধারণ ধর্মঘট, ইটালরি কারখানা দখলএবং শ্রমিক শ্রেণীর উদ্দোগে সমগ্র মহাদেশ জুড়ে গন আন্দোলন ইত্যাদী । কিন্তু র্দুভাগ্যবশত: এই সমস্ত কর্মকান্ডই  ব্যার্থ হয়ে যায়।  

এই র্ব্যাথতার বহু কারণ বিদ্যমান ছিল । তা স্বল্প কথায় বলা সম্ভব নয় । শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলন স্যোসাল ডেমক্রেটিক সংশোধন বাদী নেতাদের দ্বারা ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত ছিল । তখন কমিউনিষ্টদের হাতে যতেষ্ঠ সময় ছিলনা  এইরূপ আন্দোলনকে সংগঠিত করার । ফলে অনির্বায ভাবেই আন্দোলনে মারাত্মক কিছু ত্র“টি থেকে যায়। এই সকল ঘটনা প্রবাহের ফলে রাশিয়ার বিপ্লব বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে । অনগ্রসর,কৃষি প্রধান কৃষক অধ্যুষিত দেশটি প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ  দ্বারা ধ্বংস প্রাপ্ত হয় । এত কিছুর পরও সঠিক ভবেই ঠিকে ছিল তারা, কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই, আবার গৃহ যুদ্ধের সমরচক্র দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং প্রতি বিপ্লব সংঘটিত হয়, আক্রমণ চালায়  ২১নং বিদেশী আর্মী যারা সোভিয়েতগুলোকে ধ্বংস করার প্রচেষ্ঠা চালায় এবং তারা অনেক ক্ষেত্রে সফল ও হয় ।

যাইহোক, অবশেষে রেড আর্মী যুদ্ধে বিজয় লাভ করে । কিন্তু তার জন্য প্রচুর মূল্য দিতে হয়েছে । শুধুমাত্র অর্থনীতিই ধ্বংস প্রাপ্ত হয়নি বরং জনগনকে ও অর্ধাহারে অনাহারে থাকতে হয়েছে । এমনকি অত্যন্ত প্রতিভাবান,বিশ্বস্থ কমিউনিষ্ট বিপ্লবীদেরকে সেই কঠিন সময়ে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে । শ্রমিক শ্রেণীর গনতনন্ত্রের জন্য সাপ্তাহিক কর্মসময় সংক্ষিপ্ত করা প্রয়োজন ছিল, যেন শ্রমিকগন শিক্ষা দীক্ষায়  অংশ গ্রহন করতে পারেন । এবং নিজেদের যোগ্যতা বৃদ্ধি করে রাজনীতি ও সমাজ পরিচালনায়  অংশ গ্রহন করতে পারেন। কিন্তু রাশিয়াতে ছিল এর বিপরীত অবস্থা সাধারন জনগনের জীবন যাত্রার মান ছিল অত্যন্ত নিম্ন মানের অন্যদিকে কর্ম সময় ছিল র্দীঘ । ফলে স্বভাবিকভাবেই সোভিয়েতে শ্রমিকদের অংশগ্রহন ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং আমলাতান্ত্রিক একটি র্কমকর্তা শ্রেণীর উত্থান ঘটতে থাকে। যা ক্রমে শ্রমিকদেরকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে থাকে অর্থাৎ শ্রমিকদেরকে বিরাজনৈতিক অবস্থার দিকে ঠেলে দেয় ।

মহান লেনিন তার সর্বশেষ লেখায় আমলাতন্ত্র সর্ম্পকে সবিশেষ সর্তক করে ছিলেন । যাহা অনেক বছর ষ্ট্যালিনের দখলে গোপনীয় অবস্থায় ছিল কিন্তু তার সুকঠিন  আমলাতান্ত্রিক শাসন আমলে তাতে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করা সম্ভব ছিলনা। সেই সময়ে ও কমিউনিষ্ট পার্টির নেতৃত্ব পর্যায়ের একটি বিরাট অংশ এই পরিস্থিতির বিরোধী  ছিলেন । কিন্তু বাস্তব কারনেই পার্টির ভেতর থেকে গড়ে উঠা আমলাতন্ত্রকে উচ্ছেদ করা সম্ভব ছিলনা ।  আমরা যদি ১৯১৭ সালের মহান অক্টোবর বিপ্লবের নেতাদের দিকে থাকাই তাহলে দেখতে পাব যারা লেেিনন পাশে থেকে বিপ্লব করে ছিলেন ১৯৪০ সালে একমাত্র ষ্ট্যালিন ছাড়া আর কেহ ই জীবিত ছিলেন না। অন্যানদের প্রায় সকলেই ষ্ট্যালিনের হাতে গুলিবিদ্ব হয়ে মারা যান । অথবা কারাগারে, লেবার ক্যাম্পে মারা য়ান, অথবা নিখোঁজ হন চিরতরে । তাঁদের খুব অল্প সংখ্যকই মারা গেছের বার্ধক্য জনিত কারনে । ন্যায়বান, বিশ্বস্থ হাজার হাজার কমিউনিষ্টকে হত্যা করা হয় অথবা মারা যান ষ্ট্যালিনের কুখ্যাত কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে । দ্ষ্টু আমলাতান্ত্রিকতার বিরোদ্ধে সবচেয়ে যিনি সরব ছিলেন তিনি হলেন লিয়ন ট্রটস্কি । যিনি অক্টোবর বিপ্লবে লেনিনে সাথে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং পরর্বতীতে লাল ফৌজ সংগঠিত করেছিলেন ।

রাশিয়ার পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, ট্রটস্কির মত একজন মহান বিপ্লবী ও বিশাল ব্যক্তিত্বের অধিকারী ব্যাক্তি ও নিজেকে বহু বছর কমিউনিষ্ট আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন । বিশেষ করে যারা শর্তহীনভাবে ও অবলীলায় ষ্ট্যালিনীয় আমলাতন্ত্রের জোয়ালে মাথা ডুকিয়ে রেখেছিল তাদের কাছ থেকে। আর সেই কারনেই পরবর্তীতে সমাজতন্ত্রিক আন্দোলনে তিনি প্রাসঙ্গীক হয়ে উঠেন । উদাহরণ হিসাবে বলা যায় দক্ষিণ আফ্ররিকার কমিউনিষ্ট পাটির্র (সাবেক ষ্ট্যালিনিষ্ট) বিগত কংগ্রেসে  তাদের কমরেডদেরকে ট্রটস্কির লিখা বই পত্র বিশেষ ভাবে অধ্যয়নের আহবান জানায় । একজন কমিউনিষ্ট কেবলমাত্র মুক্তমন সহকারে বন্ধুত্বর্পূণ পরিবেশে বিতর্ক ও যুক্তির মাধ্যমে শিখতে পারেন কিভাবে ষ্ট্যালিনিজমের উত্থান ও বিকাশ ঘটেছিল?